neemkunibd.com

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে টেলিকম সেবা বিপর্যস্ত — ৫ হাজারের বেশি মোবাইল টাওয়ার বন্ধ, জরুরি জেনারেটর সংযোগে নেটওয়ার্ক সচল রাখার চেষ্টা।


বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সারাদেশে ৫০০০+ মোবাইল টাওয়ার বন্ধ

টেলিযোগাযোগ সেবায় বড় ধরনের ব্যাঘাত

সাম্প্রতিক নিম্নচাপ, ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে। দেশের ৫ হাজারের বেশি মোবাইল টাওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে, যা টেলিকম সেবায় বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।


৫ হাজারের বেশি টাওয়ার বন্ধ: কীভাবে জানলেন কর্তৃপক্ষ?

শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়্যব আহমদ তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান। তিনি উল্লেখ করেন, বিদ্যুৎহীনতায় টাওয়ার সাইটগুলোর একটি বড় অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে বরিশাল, সিলেট দক্ষিণ, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা উত্তর, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


পরিসংখ্যান: কতটা ভয়াবহ অবস্থা?

  • মোট মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা: আনুমানিক ১৮,৮০০+
  • বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন টাওয়ার: ৮,২৬২টি (প্রায় ৪৪%)
  • বর্তমানে সচল টাওয়ার: মাত্র ৬৪.২% টাওয়ার
  • সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন টাওয়ার: ৫,০০০+

এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে দেশের প্রায় অর্ধেক মোবাইল নেটওয়ার্ক সাইট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা গ্রাহকদের ভয়াবহ সংকটে ফেলছে — বিশেষত দুর্যোগকালীন সময়ে, যখন যোগাযোগ সবচেয়ে জরুরি।


জরুরি প্রতিকার: টাওয়ার কোম্পানির উদ্যোগ

জেনারেটর দিয়ে নেটওয়ার্ক সচল রাখার চেষ্টা

প্রযুক্তিগত ব্যাকআপ হিসেবে টাওয়ার কোম্পানিগুলো ও মোবাইল অপারেটররা এরই মধ্যে কিছু সাইটে পোর্টেবল জেনারেটর যুক্ত করেছে। এখন পর্যন্ত ৬২৪টি সাইটে এই জেনারেটর সংযুক্ত করা হয়েছে এবং আরও ৫০৪টি জেনারেটর সংযোগের প্রক্রিয়া চলছে।


সাইট রিকভারি কার্যক্রম

পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড ও মোবাইল নেটওয়ার্ক টিম একযোগে কাজ করছে বিদ্যুৎ পুনঃস্থাপন এবং টাওয়ার সচল করার জন্য। বন্যার পানিতে প্লাবিত অঞ্চলে লজিস্টিক সাপোর্টের ঘাটতি থাকলেও সীমিত সম্পদ নিয়েই চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


ব্যবসা ও সাধারণ গ্রাহকরা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত?

এই অবস্থায় অনেক গ্রাহক কল করতে পারছেন না, ইন্টারনেট সংযোগ নেই, জরুরি যোগাযোগ স্থাপন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে রিমোট এলাকায় অনলাইন ভিত্তিক ব্যাংকিং, ডিজিটাল পেমেন্ট, চিকিৎসা সহায়তা এমনকি জরুরি রেসকিউ অপারেশনেও টেলিকম বিচ্ছিন্নতা বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।


বিশ্লেষণ: এই দুর্যোগ টেলিকম অবকাঠামোর দুর্বলতা প্রকাশ করল

বাংলাদেশে টেলিকম অবকাঠামো এখনো অনেকাংশে বিদ্যুৎনির্ভর। ব্যাকআপ পাওয়ার সিস্টেম যেমন জেনারেটর ও ব্যাটারি ব্যাংক থাকলেও সেগুলোর সংখ্যা ও সক্ষমতা এখনও পর্যাপ্ত নয়। এই দুর্যোগ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে:

  • বিদ্যুৎনির্ভরতা টেলিকম খাতে একটি বড় দুর্বলতা
  • দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় এবং বিকল্প পাওয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার অপরিহার্য
  • জেনারেটর রেসপন্স সিস্টেমকে আরও দ্রুত এবং মডার্ন করতে হবে


বর্তমান পরিস্থিতি দেশের টেলিকম খাতের দুর্বলতাগুলোকে সামনে এনেছে। এটি কেবল একটি টেকনিক্যাল সমস্যা নয়, বরং একটি স্ট্র্যাটেজিক চ্যালেঞ্জ যা দেশের ডিজিটাল সংযোগ এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজন:

  • অবিচ্ছিন্ন পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেম
  • টাওয়ার ডিজাইন ও অবস্থান নির্ধারণে দুর্যোগ ঝুঁকি বিশ্লেষণ
  • স্থানীয় পর্যায়ে জেনারেটর স্টেশন বা ব্যাটারি চার্জিং হাব

সরকার, মোবাইল অপারেটর, টাওয়ার কোম্পানি এবং বিদ্যুৎ বিভাগ — সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে যেন এমন বিপর্যয় ভবিষ্যতে আরও ভালোভাবে প্রতিহত করা যায়।



সূত্র : অনলাইন   


Post a Comment

If you any Question, Please contact us.

Previous Post Next Post