প্রেগর জোহান মেন্ডেল তাঁকে বলা হয় বংশগতিবিদ্যার জনক। তিনি ছিলেন একজন  অস্ট্রিয় ধর্মযাজক যিনি মটরশুঁটি উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বংশগতির ছুটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র প্রকাশের কারণে বিখ্যাত হয়ে আছেন। 


গ্রেগর মেন্ডেল
গ্রেগর মেন্ডেল (১৮২২-১৮৮৪); source: Wikimedia Commons

১৮২২ সালের ২০ জুলাই বর্তমান হিনচিৎসে, চেক প্রজাতন্ত্রের (তৎকালীন হেইঞ্জেনডোর্ফ, সাইলেশিয়া যা অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল) একটি ছোট্ট গ্রামে, এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের জন্ম হয়। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল জোহান মেন্ডেল। তাঁর বাবার নাম আন্টন মেন্ডেল এবং মায়ের নাম রোজিনে শোয়ার্টলিচ।

স্থানীয় এক পুজারীই প্রথম তাঁর বাবাকে ১১ বছর বয়সী মেন্ডেলকে স্কুলে পাঠানোর কথা বলেন। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম হলেও অর্থাভাবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে হয়নি মেন্ডেলকে। তাঁর বাবা তাঁর শিক্ষার ব্যাপারে ভীষণভাবে আগ্রহী ছিলেন। তিনি তাঁর সঞ্চয়ের কৃষিজমি বিক্রি করে মেন্ডেলকে শিক্ষিত করিয়েছিলেন।

১৮৪০ সালে জিমনেসিয়াম স্কুলে তাঁর পড়াশোনা শেষ হলে তিনি বৃত্তি নিয়ে ২বছরের জন্য ওলোমোউৎস শহরে অবস্থিতফিলোসফিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়তে যান। । সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। ১৮৪৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি তাঁর পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ফ্রিডরিখ ফ্রার্জের কথা অনুযায়ী ব্রনের (বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রের ব্রনোতে) “যাবে অব সেন্ট থমাস' নামে একটি অগাস্টিনিয়ান মঠে যোগদান করেন তিনি। পূজারী হলেই এই মঠের তরফ থেকে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায় তাই তিনি বাধ্য হয়েই একপ্রকার এই জীবন বেছে নেন। মঠে এসেই মেন্ডেল তাঁর নামের আগে গ্রেগর অংশটি যুক্ত করেছিলেন এবং জোহান মেন্ডেল হয়ে উঠেছিলেন গ্রেগর জোহান মেন্ডেল।

১৮৪৮ সালে তিনি 'প্যারিশ' ভুক্ত হন অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট জায়গার মুখ্য যাজক হিসাবে নির্বাচিত হন এবং নিজস্ব গীর্জা লাভ করেন। কিন্তু গীর্জার নিয়মে বন্দী জীবন তাঁর ভালো লাগত না। তাই এক বছর পরই মেন্ডেল গীর্জা ছেড়ে অ্যাবট সিরিল ন্যাপ এর কথায় জনিম-এ(জোঞ্জোমো, চেক প্রজাতন্ত্র) প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতে ভালো না লাগায় তিনি হাই স্কুলে শিক্ষক হবার জন্য পরীক্ষা দিলেও দুর্ভাগ্যক্রমে অসফল হন।

১৮৫১ সালে তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করতে যান। ওখানে থাকাকালীন তিনি অস্ট্রিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান ডপলার এবং গাণিতিক পদার্থবিদ ত্যান্ত্রেস ভন এটিংহাউসনের অধীনে পদার্থবিদ্যার পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি শারীরাবস্থান ও উদ্ভিদদেহতত্ব এবং মাইক্রোস্ষোপ এর ব্যবহার শেখেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী ফ্রেঞ্জ উঙ্গারের কাছে।

এই সাতটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করেন মেন্ডেল; source: Wikiwand

১৮৫৩ সালের গ্রীন্মে তিনি মঠে ফিরে আসেন ও ব্রনের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মূলতঃ পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং শিক্ষক ও সহকর্মীদের অনুপ্রেরণায় মঠের বাগানে তাঁর গবেষণার কাজ শুরু করেন। ১৮৫৬ সালে তিনি আবার শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেন কিন্তু নার্ভাস বেকভাউনের জন্য এবারেও অসফল হুন। এরপর ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৩ পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার মটরশুটির ওপর মেন্ডেল জেনেটিক পরীক্ষাগ্ডলি করেন। অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার ফলে তিনি বংশগতির ছুটি সূত্র যথাক্রমে একটি পৃথকীকরণ সূত্র ও অন্যটি স্বাধীন সঞ্চারণ সূত্র আবিষ্কার করেন, যা পরবর্তীকালে মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র নামে পরিচিতি লাভ করে।

আশ্রমের এই অংশেই মটরশুঁটির গাছ রোপন করতেন মেন্ডেল; source: DNA Learning Center

১৮৬৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী মোরাভিয়ায় ব্রনের ন্যাচারাল সায়ে্স সোসাইটির কাছে তাঁর কাজ উপস্থাপন করেছিলেন। তাঁর পেপার “এক্সপেরিমেন্ট অন প্ল্যান্ট হাইব্রিডস” যা পরের বছর ব্রনের ভারহ্যান্ডলুঞ্জেন ডেস ন্যাচারফোরসচেডেন ভেরাইনস নামক জায়গা থেকে প্রকাশিত হয়। তাঁর কাজটির প্রশংসা করা হলেও তাঁর কাজের গুরুত কেউ তখনও বুঝে উঠতে পারেননি কারণ কাজটি তাঁর সময়ের চেয়ে বেশ অনেকটাই এগিয়ে ছিল।

মটরশ্ঁটি নিয়ে গবেষণার পর তিনি প্রাণীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং এ ক্ষেত্রে তিনি মৌমাছিকেই বেছে নিয়েছিলেন। তিনি মৌমাছির একটি হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেন কিন্তু মৌমাছির প্রজনন নিয়ন্ত্রণ দুঃসাধ্য হওয়ায় তিনি এদের বংশগতির সঠিক কোনো বিন্যাস খুঁজে পাননি।

১৮৬৫ সালেই তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন "অস্ট্রিয়ান মেটেওরোলজিক্যাল সোসাইটি'। এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল তিনি এই সোসাইটির সদস্য হয়ে সারাজীবনে যতগুলো গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন ততগুলো গবেষণাপত্র তাঁর জীববিজ্ঞান বিষয়েও নেই।



১৮৬৮ সালে তিনি মঠের অ্যাবট অর্থাৎ মঠাধ্যক্ষ হন। অ্যাবট হিসেবে তিনি খুব তৎপরতার সাথেই দায়িত্ব পালন করছিলেন কিন্তু বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের চাপে তাঁর গবেষণাকাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।১৮৭০ সালে ব্রনোকে আঘাত হানতে পারে এমন টর্নেভোর ব্যাপারে একটি সতর্কবার্তা ও তার বিশ্লেষণও দিয়েছিলেন তিনি। 

১৮৮৪ সালের ৬ জানুয়ারি ৬১ বছর বয়সে নেফ্রাইটিসে ভূগে মেন্ডেলের মৃত্যু হয়।

Post a Comment

If you any Question, Please contact us.

Previous Post Next Post