সম্প্রতি বিটিআরসি ‘নেটওয়ার্ক টপোলজি ও লাইসেন্সিং রেজিম’ শিরোনামে টেলিকম নীতিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। তড়িঘড়ি করে দুটি কর্মশালার আয়োজন করা হলেও বিদ্যমান টেলিকম লাইসেন্সধারীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রস্তাবিত টপোলজিতে একতরফাভাবে IGW, ICX, IIG এবং অন্যান্য লাইসেন্স বাতিল করার পরিকল্পনা রয়েছে। অধিকাংশ লাইসেন্স মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের (MNO) দেয়ার কথা বলা হয়েছে, যা মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য একটি ‘ইউনিফাইড লাইসেন্স’ চালুর ইঙ্গিত।
২০০৭ সালের আইএলডিটিএস (ILTDS) নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা, বৈদেশিক মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ করা, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এই নীতির মাধ্যমে বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের টেলিকম খাত স্থিতিশীল ছিল এবং সেবার মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। সকল লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানই নিয়মিত অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে এবং ভবিষ্যতের ৫জি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
বর্তমানে বিটিআরসির এই হঠাৎ পরিবর্তন হতাশাজনক এবং বহুজাতিক স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত বহন করে। কর্মশালায় কিছু বিদেশি পরামর্শক ও ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’-এর প্রভাব স্পষ্ট ছিল। দেশীয় উদ্যোক্তাদের অবদান উপেক্ষা করে IGW, ICX, IIG স্তর বিলুপ্ত করার প্রস্তাব এসেছে। অথচ এই স্তরগুলো—
- নেটওয়ার্কে গুণগত পরিবর্তন এনেছে,
- ডেটা ট্রাফিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে,
- হাজার হাজার তরুণকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছে,
- সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
২০০৮ সালে রাজস্ব যেখানে ৩,৬০০ কোটি টাকা ছিল, ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০,০০০ কোটি টাকায়। বর্তমান আন্তর্জাতিক ভয়েস ট্রাফিক কমলেও, সেই নীতির কারণে এটি আবার বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে প্রশ্ন হলো—যদি সব লক্ষ্যে সফলতা আসে, তাহলে কেন নতুন টপোলজি দরকার?
নিয়ন্ত্রকের পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষ করে বিদেশি এমএনওদের প্রতি, এখন প্রশ্নের মুখে। যেখানে দেশের অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা আপত্তি জানালেও বিটিআরসি বলছে, তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে—এই দাবিও বিতর্কিত।
বৈধ প্রশ্ন হলো:
- বর্তমান কাঠামোর ত্রুটি নিয়ে কি গবেষণা হয়েছে?
- স্টেকহোল্ডারদের মতামত ছাড়া হঠাৎ পরিবর্তন কেন?
- একীভূত না হয়ে নতুন কাঠামোর প্রয়োজন কেন?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—আমরা কি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে পুরো খাত তুলে দেব, নাকি ধীরে ধীরে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করব?
টেলিকম খাত সংস্কারের আগে সরকারকে এই মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর স্পষ্টভাবে দিতে হবে।
Post a Comment
If you any Question, Please contact us.