সারা বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ ভাইরাসের আক্রমনে দিশেহারা তখন একদল গবেষক চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিভাবে এই ভয়ংকর ভাইরাসকে ধংস করা যায়। এ যেন রূপকথার থেকে উঠে আসা এক দৃশ্য। পাতাল থেকে উঠে এসেছে তিন মাথাওয়ালা ড্রাগন হাইড্রা যার একটা মাথা কাটলে বের হচ্ছে আরো তিনটি মাথা। মানুষ তার সাথে লড়ছে ,বাচার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এই যুদ্ধে প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের চিকিৎসকরা। আর বদ্ধ ল্যাবরেটরির মধ্যে গবেষকরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন দানব ধংসের ফর্মুলা বানাতে। পুরো দৃশ্যটা কল্পনার চোখে দেখলে এমনই দেখা যাবে। সারা বিশ্বের প্রতিটা মানুষ তাকিয়ে আছে তাদের দিকে, কবে তারা মুক্তি পাবে এই দানব এর হাত থেকে। অপেক্ষায় আছে সবাই কবে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিবে।
করোনা ভাইরাসের জগতে একটু ঘুরে আসা যাক। এই ভাইরাসের অনেকগুলো শ্রেনী আছে , আমরা শুধু মানুষকে আক্রমন করতে পারে এমন শ্রেনীগুলোর নাম জানার চেষ্টা করবো। এই ভাইরাসের নামকরনের করা হয়েছে এর উপরের অংশের মুকুটের মত আংটা থাকার কারনে।
এই ভাইরাসের ৪ টি উপ-শ্রেনী আছে,
১। আলফা
২। বিটা
৩। গামা
৪। ডেল্টা
১৯৬০ এর দশকে প্রথম এই ভাইরাস মানুষকে আক্রমন শুরু করে। তারমানে এই ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ মানুষের আজকে থেকে নয়।
চলুন জেনে নেয়া যাক মানুষকে আক্রমন করতে পারে এমন ৭ টি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে,
১. 229E (আলফা করোনা ভাইরাস)
২. NL63 (আলফা করোনাভাইরাস)
৩. OC43 ( বিটা করোনাভাইরাস)
৪. HKU1 (বিটা করোনাভাইরাস)
৫. MERS-COV (মিডল ঈস্ট রেসিপিরেটরি সিনড্রোম)
৬. SARS-COV ( সেভেয়ার একিউট রেসিপিরেটরি সিনড্রোম)
৭. SARS-COV 2 or COVID-19 ( নোভেল করোনা ভাইরাস-২০১৯ অথবা উহান করোনা ভাইরাস)
জেনে রাখা ভালো, এই ভাইরাস যে শুধু মানুষকে আক্রমন করে তা কিন্তু নয়। বিড়াল, কুকুর, বাঘ, সিংহ , পাখিও এর আক্রমনের শিকার হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর লিয়াং ঝ্যাং এবং বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্থনি গ্রিফিথস গবেষক দলের একটি ভাইরাস ধরার ফাদের গবেষনার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করবো। তারা চমৎকার একটা পদ্ধতি গবেষনা করে বের করেছেন। এই পধতিতে ভাইরাস মানবদেহের কোষে সংক্রমিত হতে বাধা দিবে।
গবেষকরা দুটি ন্যানোস্পঞ্জের স্যাম্পল তৈরি করেছেন। এই ন্যানোস্পঞ্জ মানবকোষে কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রমনের আগেই ভাইরাসকে আবদ্ধ করে ফেলে একে নিউট্রোলাইজ করে দিবে। ভাইরাস মানবেদেহের ফুস্ফুসের এপিথেলিয়াল এবং মাইক্রোফেজকে আক্রমন করে বংশ বৃদ্ধি করে থাকে। এপিথেলিয়াল এবং মাইক্রোফেজের বাইরে পলিমারিক ন্যানো পার্টিকেল ভাইরাস আক্রমন করে থাকে। এই ন্যানোস্পঞ্জ এর বাইরের আবরনে ভাইরাস যে ঝিল্লি আক্রমন করে সেই রিসেপ্টর এবং প্রোটিন থাকে যা ভাইরাসকে ফাদে ফেলতে সাহায্য করে থাকে। এর মূল থিওরি হচ্ছে, অনেকগুলো ন্যানোস্পঞ্জ স্থাপন করা যাতে ভাইরাস প্রবেশ করার সাথে সাথে তাকে ফাদের ভিতর আটকে ফেলা। ভাইরাসকে আটকে ফেলে কোষকে সংক্রমনের থেকে রক্ষা করা । ভাইরাস যখন নিজের প্রতিলিপি করতে পারবে না তখন সে নিউট্রোলাইজ হয়ে পড়বে।
গবেষকরা প্রাথমিকভাবে ইদুরের দেহে ন্যানোস্পঞ্জগুলো প্রবেশ করান। ৩ দিন পর্যন্ত তারা পর্যবেক্ষন করে দেখেন ন্যানোস্পঞ্জ ইদুরের দেহের কোন কোষের ক্ষতি করা ছাড়াই অবস্থান করছে। এছাড়াও রক্ত কনিকাগুলোর সাথে শরীরের একটা অংশ হিসেবেই বিচরন করছে।এর পরবর্তীতে, বানরের দেহে কোভিড-১৯ ভাইরাস ও ন্যানোস্পঞ্জগুলো স্থাপন করেন। তারা সেখানে দেখতে পান নির্দিষ্ট পরিমান ন্যানোস্পঞ্জ স্থাপন করে ৯০% কোভিড-১৯ ভাইরাসকে নিউট্রোলাইজ করেছে এবং শরীরের বাকী অংশে সংক্রমন হওয়া থেকে বিরত রেখেছে।
গবেষকরা আরো কয়েকটি প্রানীর উপরে পরীক্ষা করে সাফল্য পেলে এরপরে মানুষের উপর এইটা পরীক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রফেসর লিয়াং ফ্যাং ঝ্যাং ।
কোভিড-১৯ যুদ্ধের গবেষনায় এটি যুগান্তকারী এক আবিষ্কার হতে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই।আরেকটি গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হচ্ছে, এই ন্যানোস্পঞ্জ শুধু কোভিড-১৯ নয় অজ্ঞাত কোন ভাইরাস ফুস্ফুস আক্রমন করতে গেলে তাকেও নিউট্রোলাইজ করার ক্ষমতা রাখে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
চিকিৎসাবিহীন এই পদ্ধতি মানব সভ্যতার জন্য এক অনন্য দুয়ার খুলে দিতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ ন্যানো মেডিসিন জার্নাল, ন্যানোলেটারস, ন্যাচার টেকনোলজি
লেখক
Post a Comment
If you any Question, Please contact us.