তিনি মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্সের সিইও এবং সিটিও, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসের সিইও ও পণ্য প্রকৌশলী, সোলারসিটির চেয়ারম্যান, দি বোরিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা নিউরালিংকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ওপেনএআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি হাইপারলুপ নামক কল্পিত উচ্চ গতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থার উদ্ভাবক। ২০১৮ সালে ইলন মাস্ক 'ফেলো অব দি রয়্যাল সোসাইটি' নির্বাচিত হন। একই বছর ফোর্বস সাময়িকী 'বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি' তালিকায় ২৫ তম স্থানে তার নাম ঘোষণা করে। ২০১৯ সালে ফোর্বসের 'আমেরিকার সবচেয়ে উদ্ভাবনী নেতৃত্ব' তালিকায় যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ফোর্বসের তথ্যমতে ১২ আগস্ট ২০২০ সাল পর্যন্ত ইলন মাস্ক বিশ্বের ৩১ তম বিলিয়নিয়ার এবং তার মোট সম্পত্তির মূল্য ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মায়ের কানাডার নাগরিকত্বের সুযোগে মাস্ক প্রবল বর্ণবাদী সংঘাতের সময় কানাডায় পাড়ি জমান। ভালো শিক্ষার আশায় আফ্রিকা ছেড়ে কানাডা চলে আসেন। তিনি কুইনস বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে কানাডা গমণের পূর্বে প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প সময়ের জন্য লেখাপড়া করেছিলেন। দুই বছর কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার পর পেন্সিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন এবং অর্থনীতি ও পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে অবশেষে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স এবং ম্যাটারিয়াল সায়েন্সের উপর উচ্চতর ডিগ্রী নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক দু’দিন পরেই তার ভাই কিম্বাল মাস্ককে সাথে নিয়ে প্রথম আইটি কোম্পানি জিপ২ কর্পোরেশান চালু করার লক্ষ্যে স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে আসেন। এর পর থেকেই সবকিছুর পরিচয় ছাপিয়ে এলন মাস্ক হয়ে উঠার গল্পের শুরু।
পৃথিবী পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। বাস্তবে তা করতে পারেন কয়জন? তবে ব্যতিক্রমী এলন মাস্ক। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি পাল্টে দিয়েছেন পৃথিবীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। মহাকাশযান, ইলেকট্রিক গাড়ি ও অনলাইন ট্রানসেকশন এই তিন ইন্ডাস্ট্রিকে আমূল বদলে দেওয়া স্বপ্নবাজ মানুষটির সবচেয়ে বড় স্বপ্ন একদিন মঙ্গলে হবে তাঁর বসতি। মঙ্গলে কোনো এক ঘরে এক কাপ কফি খেতে খেতে মৃত্যু হবে তাঁর। এমনই পাগলাটে তিনি।
এলন মাস্কের ছেলেবেলা কাটে তার ভাই কিম্বাল এবং বোন টস্কার সাথে। নয় বছর বয়সে যখন প্রথম কম্পিউটার হাতে পান, সেটির মেমরি ছিল ৫ কিলোবাইট । “How to Program” গাইড মাত্র তিনদিনে আত্মস্থ করে ছোট্ট মাস্ক একটা ভিডিও গেম বানিয়ে ফেললেন ‘ব্লাস্ট’ নামে, যেটা তার মতে- ফ্ল্যাপি বার্ডের চেয়ে বহুগুণে ভাল। ১৯৮৩ সালে গেমটি ৫০০ ডলারে কিনে নিয়েছিল একটি কম্পিউটার ম্যাগাজিন যখন মাস্কের বয়স মাত্র ১২।। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নিজের বানানো গেম বিক্রি করে তার জীবনের প্রথম আয় ৫০০ ডলার। শেখার আগ্রহ ছিল প্রচুর। দিনে ১০ ঘন্টার উপরে বই পড়তেন। পড়ার ধাত এতোই বেশি ছিল যে লাইব্রেরীর সব বই শেষ করে পুরো এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাই পড়ে ফেললেন।
We've used reinforcement learning from human feedback to train language models for summarization. The resulting models produce better summaries than 10x larger models trained only with supervised learning: https://t.co/Sk31d1CnTu
— OpenAI (@OpenAI) September 4, 2020
মাস্ক সবসময় ৫ টি বিষয় নিয়ে ভাবতেন। তিনি মনে করতেন ইন্টারনেট, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, মহাকাশ ভ্রমণ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এবং বায়োটেকনলজি পুরো সভ্যতাকে পালটে দিতে পারে। ইন্টারনেটের প্রতি প্রবল ঝোঁক থাকার কারণে যোগ দিয়েছিলেন সেই সময়ের ইন্টারনেট জায়ান্ট নেটস্কেপে। নেটস্কেপ থেকে নিগৃহীত হয়ে তাঁর ভাই কিম্বাল মাস্ককে নিয়েই প্রতিষ্ঠা করলেন নিজের একটি কোম্পানি জিপ২(zip2) । জিপ২ একটি ওয়েব নির্ভর সফটওয়ার কোম্পানি যার কাজ ছিল ইন্টারনেটে একটি বিজনেস ডিরেক্টরি ও ম্যাপ তৈরি করা।
তখনকার সময়ে ব্যবসায়ীরা ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দিয়ে পয়সা খরচ করাকে বোকামি মনে করত, কিন্তু ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তার সাথে সাথে জিপ২ ও ফুলেফেঁপে উঠল। বিশ্বখ্যাত কোম্পানি কমপ্যাক জিপ২ কে ১৯৯৯ সালে ৩০৭ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। নিখুঁত ভবিষ্যতদ্রষ্টা এলন মাস্ক মাত্র ২৭ বছরেই হন মিলিওনেয়ার।
মিলিওনেয়ার হবার পর মাস্ক থেমে থাকেননি। জিপ২ থেকে পাওয়া অর্থের তিন চতুর্থাংশই বিনিয়োগ করেন তার নতুন আইডিয়ার পেছনে। তৈরি হয় এক্স.কম (X.com)। এখান থেকেই সূচনা হয় পেপ্যাল এর। উল্লেখ্য স্টেডিয়ামের লকার রুমে রাত জেগে জেগে কাজ করে মাস্ক X.com তৈরি করেছিলেন। মূলত পেপ্যাল হলো দুইটি ফিনান্সিয়াল কোম্পানির যৌথ উদ্যোগ। X.com এর অফিস বিল্ডিং এ পিটার থিলের ইন্টারনেট ফিনান্সিয়াল কোম্পানি 'কনফিনিটি' র অফিস ছিলো। ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বুঝতে পেরে প্রতিযোগিতা ছেড়ে দুটি কোম্পানি একসাথে হয়ে গঠন করে ‘পেপ্যাল’। পরবর্তীতে ২০০২ সালে ওয়েব জায়ান্ট ebay পেপ্যালকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়, যেখানে সর্বোচ্চ শেয়ার-হোল্ডার হিসেবে ট্যাক্স বাদ দিয়েই মাস্ক উপার্জন করেন ১৮০ মিলিয়ন ডলার।
এক্স ডট কম বিক্রির করে যে মোটা অঙ্কের অর্থ তিনি পেয়েছিলেন তার অধিকাংশই ব্যয় করেছেন সৌরশক্তির পেছনে। ছোটবেলা থেকে আবিষ্কারের নেশায় ছুটে চলা এই আয়রন ম্যানের স্বপ্ন ছিলো কালো থাবা মুক্ত এক পৃথিবীর, যেখানে মানুষ নির্ভয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারবে, নিজেদের পরম ভালোবাসায় গড়ে তুলবে এক সুন্দর পৃথিবী। সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলার প্রথম প্রভাতে ২০০৬ সালে তার কাজিনের সাথে মিলে গঠন করে আরেকটি কোম্পানি ‘সোলার সিটি’। এটির লক্ষ্য সূর্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘরদোরের জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুৎ যা ফুয়েলের মাধ্যমে তৈরি করা হয়, তার পরিমাণ কমিয়ে আনা। এর মাধ্যমে তিনি চেয়েছেন তার পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ধারণাটির আরো বিস্তার ঘটাতে।
তাঁর তৈরি সোলার সিটির সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে গড়ে ওঠে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি। সোলার সিটির বদৌলতে সবখানে পৌঁছে যেতে থাকে সুলভ মূল্যের বিদ্যুৎ। বর্তমানে আমেরিকার বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে, তার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এলন মাস্কের সোলার সিটি। আর সোলারসিটি এখন আমেরিকার সর্বাধিক সোলার প্যানেল সরবরাহকারী কোম্পানি। তারা এখন আমেরিকার সর্ববৃহৎ সোলার প্রস্তুত কারখানা বসাচ্ছে বাফালোতে। এবং এই তিন কোম্পানি মিলে কর্মীর সংখ্যা ত্রিশ হাজারেও বেশি!
সোলার সিটি তৈরি করার আগে তিনি ২০০২ সালে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে 'স্পেস এক্স' নামে একটা নতুন কোম্পানি গঠন করেন। এটি মূলত একটি রকেট নির্মাণ কোম্পানি। মহাকাশ ভ্রমনের খরচ মানুষের নাগালের মধ্যে এবং ১০০ বছরের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসবাস নিশ্চিত করণের পেছনে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। নাসা বা ইসরো যে রকেটগুলো মহাকাশে পাঠায়, সেগুলো অনেকটা ওয়ান টাইম। অর্থাৎ একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়ার মতো, যাকে বলে ইউজ এন্ড থ্রো টাইপ। রকেটগুলো পৃথিবীর বলয় থেকে একটা টার্গেটে পৌঁছার পরপরই ধ্বংস হয়ে যায়। সে কথা মাথায় রেখে এলন হাত দেন তার ড্রিম প্রজেক্টে, যার নাম ‘স্পেস এক্স’। তিনি তৈরি করলেন পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট। রকেট মহাকাশে পাঠাতে যে জ্বালানি প্রয়োজন হয়, তা প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ। মাথা খাটিয়ে তিনি তৈরি করলেন ভাসমান গোছের এক হেলিপ্যাড। কম জ্বালানি পুড়িয়ে পৃথিবীর অদূরে কোনো মহাসাগরের নিকটবর্তী এলাকায়, যেখানে সাধারণত রকেট ব্লাস্ট হয়, সেই স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে এই হেলিপ্যাড। এতে করে রকেট সেখানে ল্যান্ড করার সুযোগ থাকবে। বর্তমানে পুনঃব্যবহারযোগ্য রকেট ব্যবহার করে মহাকাশে প্রয়োজনীয় জিনিস ও নভোচারীদের আনা নেয়া করছে 'স্পেস এক্স' ।
এলন মাস্কের ২০০২ থেকে ২০০৮ সময়টা খুব একটা ভালো যায়নি। টেক সমাজে একজন উদভ্রান্ত বিলিয়নিয়ার হিশেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। কারণ তিনি সময়ের তুলনায় অনেক আধুনিক চিন্তা করতেন। প্রকৃত অর্থে মাস্ক ভবিষৎ দেখতে পেতেন এবং সেভাবেই তিনি পরিকল্পনা করতেন। আর এই জন্যই মাস্ক সেরা এবং সময়ের তুলনায় অধিক সফল।
স্পেসএক্স এর তিনটি রকেট কক্ষপথে পৌছানোর আগেই ধবংস হয়ে যায়। সময় যখন এভাবে প্রতারণা করেছে, ঠিক তখন বিনিয়োগকারীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। দমে যাবার পাত্র নন মাস্ক। ধবংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর এক অদ্ভুত উজ্জীবনী শক্তি ছিলো তাঁর মধ্যে। নিজের ভাণ্ডার শূন্য হবার আগ পর্যন্ত তিনি প্রতিটি কড়ি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন মাস্ক। অন্যদিকে টেসলার অবস্থাও বলার মতো ছিলোনা। আমেরিকা সহ সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক ধসের কারণে বাড়তি কোন বিনিয়োগ ছিলোনা। অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিগুলো যখন দেউলিয়া হবার মুখে, ঠিক তখনি গসিপ ম্যাগাজিনগুলো টেসলাকে আখ্যায়িত করছিলো ২০০৭ এর নাম্বার ওয়ান ব্যর্থ টেক কোম্পানি হিসেবে। কিন্তু মাস্ক দমে যাওয়ার পাত্র নন, ২০০৮ এর শেষ মুহুর্তে তিনি ধবংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এলেন। স্পেসএক্সে তার চতুর্থ ও শেষ চেষ্টা সফল হল। রকেট ঠিকঠাক কক্ষপথে পৌঁছুল। নাসা পর্যন্ত ১.৬ বিলিয়ন ডলারের কন্ট্রাক্ট করল স্পেসএক্সের সাথে তাদের পরবর্তী ১২ টি রকেট উৎক্ষেপনের জন্যে। স্পেসএক্স ভালভাবেই দাঁড়িয়ে গেল। এর পর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হইনি স্পেসএক্সের ।
SpaceX training of astronauts that will fly on board Dragon’s first operational mission is complete! When the crew arrives for pre-launch preparations at the launch site, they will participate in a run-through of day-of-launch activities with the launch and pad operations teams pic.twitter.com/dmIYpVDIF1
— SpaceX (@SpaceX) September 29, 2020
টেসলা যেটা এত ব্যর্থ হওয়ার পরও এতেও বিনিয়োগ আসা শুরু করল। টেসলা তখন বাজারে নিয়ে আসল নতুন গাড়ি- টেসলা রোডস্টার। এই ‘টেসলা রোডস্টার’ আরাম, সৌন্দর্য, ব্যয়বহুলতা এবং গতি- সবদিক থেকেই যেকোনো দামী গাড়ির তুলনায় কোনো দিক থেকেই কম নয়। তাছাড়া আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তেই তিনি তৈরি করলেন গাড়ি চার্জ করার পাম্প, যেখানে কিনা বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় তার সেই সোলার সিটি থেকেই। এলনের ‘টেসলা রোডস্টার’ গাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- একবার সম্পূর্ণ চার্জ করার পর তা একটানা ৪৫০ কিলোমিটার চলতে সক্ষম ছিলো। ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত ইলন মাস্কের সবকটি প্রোজেক্টের উন্নতির গ্রাফ উর্ধ্বমূখী। প্রথম তিনটি ব্যর্থ অভিযানের পর স্পেসএক্স ২০১০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৭ টির বেশি মিশন পরিচালনা করছে যার মধ্যে শতভাগ সফলতা পেয়েছে ৮৫ টি। নাসা তাদের নিয়মিত গ্রাহক। গুগল, ফিডেলিটির মত বড় বড় কোম্পানির বিনিয়োগ আছে এখন স্পেসএক্স এ। স্পেস এক্স কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাসা থেকেও সফল। স্পেস এক্স তৈরি করতে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রকেট, যার উচ্চতা প্রায় ২৪০ মিটার। স্পেস এক্স একমাত্র কোম্পানি যারা চাঁদে এবং মঙ্গলে স্থায়ী ভাবে মানুষ পাঠানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। স্পেস এক্স সবসময় নতুন কিছু চিন্তা করে থাকে।
টেসলার মডেল-এস তুমুল জনপ্রিয় হয়, গ্রাহক রেটিং এ ৯৯/১০০ এবং ন্যাশনাল হাইওয়ে সেফটি এডমিনিস্ট্রেশন এর রেটিং এ ৫/৫ পেয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। তাছাড়া মাস্কের সর্বশেষ আবিষ্কার হলো সৌর শক্তি চালিত হাই স্পিড মোটর ‘হাইপারলুপ’। এই হাইপারলুপ মোটরের সাহায্যে লস এঞ্জেলস থেকে সানফ্রান্সিসকো পর্যন্ত ৬১৪ কিলোমিটার পথ যেতে সময় নেবে মাত্র ৩০ মিনিট। এলন মাস্কের দাবি, হাইপারলুপ হবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির যোগাযোগ প্রযুক্তি।
In-car footage from Sunday’s Plaid Model S run at Laguna Seca pic.twitter.com/rwQDBFCWoH
— Tesla (@Tesla) September 23, 2020
সৌরশক্তিনির্ভর এ ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ৬০০ মাইলেরও বেশি গতিতে যোগাযোগ করা যাবে, অথচ এ যোগাযোগ প্রযুক্তি হবে প্লেন বা ট্রেনের চেয়ে সাশ্রয়ী। স্টেশন থেকে দ্রুতগতির হাইপারলুপ প্রযুক্তির যানে চেপে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। হাইপারলুপ প্রযুক্তি মার্কিন ব্যাংকগুলোর অর্থ লেনদেনের একটি পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এলন মাস্কের মতে, হাইপারলুপ হবে শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির কনকর্ডবিমান, দ্রুতগতির ট্রেন ও এয়ার হকির নকশার সমন্বিত রূপ। এটি এমন একটি যোগাযোগব্যবস্থা হবে, যার মাধ্যমে একটি টিউব কয়েকটি দেশ অথবা শহরজুড়ে থাকবে। টিউবের ভেতর থাকবে ক্যাপসুল। টিউব ব্যবস্থার মধ্যে কোনো বায়ু থাকবে না। ফলে থাকবে না কোনো প্রকার ঘর্ষণশক্তি। এই দ্রুতগতির ক্যাপসুলে চড়ে ঘণ্টায় ৬০০ মাইল বেগে ভ্রমণ করা যাবে।হাইপারলুপ ব্যবস্থায় ঘণ্টায় দুই লাখ মানুষের ভ্রমণের সুযোগ থাকবে। আর নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪৫ মিনিট এবং নিউইয়র্ক থেকে বেইজিং যেতে লাগবে দুই ঘণ্টা। মাস্ক প্রবর্তিত এই হাইপারলুপ প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় এ বছর। হাইপারলুপ ট্র্যাক নির্মাণে খরচ হবে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার।
এই বিরাট সফলতার পেছনে ছিলো মাস্কের কাজের প্রতি ভালবাসা এবং স্বপ্নের প্রতি একাগ্রতা। জীবনের উন্নয়ের সিঁড়িতে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে। সাময়িক অনেক বাঁধা এসে স্থবির করে দিতে চেয়েছিলো পথ চলা। কিন্তু এলন মাস্ক ছিলেন অদম্য। জীবনের অসাধ্যের দিনলিপিতে যত বিদঘুটে সমীকরণ ছিল, সব সমীকরণ তিনি পালটে দিয়েছেন। সময়ের চেয়ে আধুনিক চিন্তা করে তিনি নিজেই হয়েছেন নিজের ভবিষ্যৎ নির্মাতা। কথিত আছে- কর্ম প্রণোদিত মাস্ক এ স্তরে পৌঁছেও সপ্তাহে ৮০-১০০ ঘন্টা কাজে সময় দেন। মাঝে মাঝে কাজ করতে করতেই বাড়ির রাস্তা ভুলে ঘুমিয়ে পড়েন তার ‘টেসলা’ ম্যানুফ্যাকচারিং অফিসেই। সোমবার যান লস অ্যাঞ্জেলস এ SpaceX এর তদারকিতে। মঙ্গল আর বুধবার তোলা থাকে Tesla র জন্যে। বৃহস্পতিবার আবার SpaceX। শুক্রবারটা অর্ধেক কর্মদিবস করে ভাগাভাগি করে নেয় দুটো কোম্পানি। আর মাস্ক বিশ্বাস করেন তিনি Biological Barrier ভাঙতে পেরেছেন। দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করা তার পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। একসাথে অনেকগুলো কাজ তিনি সমন্বয় করতে পারেন। নিজেকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে ছুড়ে দিয়ে নিজের সর্বোচ্চটাই বের করে আনেন তিনি।
সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, অনলাইন
Post a Comment
If you any Question, Please contact us.