neemkunibd.com
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ পরিবেশের ওপর ফেলছে মারাত্মক চাপ।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপরীত মুখ: ক্লিকেই নষ্ট হচ্ছে পানি ও বিদ্যুৎ

প্রযুক্তির যুগে এআই: আশীর্বাদ না অভিশাপ?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি সাধারণ ও অপরিহার্য প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে। ছবি সম্পাদনা, ভয়েস ক্লোনিং, ভিডিও জেনারেশন থেকে শুরু করে ভাষা অনুবাদ—সব কিছুই এখন সম্ভব মাত্র এক ক্লিকে। কিন্তু এই এক ক্লিকের পেছনের বাস্তবতাটা কি আমরা কখনো গভীরভাবে ভেবেছি?

তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে আমাদের প্রতিটি ক্লিকের পেছনে রয়েছে শক্তিশালী ডেটা সেন্টার, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার ও সার্ভার, যেগুলো চালাতে প্রয়োজন হয় বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ও পানি। এই প্রক্রিয়া শুধু যে ব্যয়বহুল তাই নয়, পরিবেশের উপরও ফেলে ভয়াবহ প্রভাব।


এআই প্রযুক্তির বিদ্যুৎ ও পানি খরচ: এক নজরে

 একটি ক্লিকেই হাজার লিটার পানি ও গিগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয়

একটি ছবি জেনারেট করতে, বা একটি বাক্য তৈরি করতে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার হয়, তার পেছনে ডেটা সেন্টারগুলোতে চলে বিশাল পরিমাণ কম্পিউটিং। এই কম্পিউটিং করতে লাগে গিগাওয়াট বিদ্যুৎ, এবং সার্ভারগুলোকে ঠান্ডা রাখতে প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় লাখ লাখ লিটার পানি।

  • ChatGPT-এর মতো মডেল ট্রেনিং করতে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন, যা প্রায় ৪০,০০০টি পরিবারের একদিনের বিদ্যুৎ চাহিদার সমান।
  • Google প্রতিদিন প্রায় ২১ লাখ লিটার পানি ব্যবহার করে সার্ভার কুলিংয়ের জন্য, যা দিয়ে প্রতিদিন ৪,২০০ জন মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করা যেত।

পানি সংকট ও বৈশ্বিক বাস্তবতা

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭২ কোটি মানুষ রয়েছে চরম পানি সংকটে। এই বাস্তবতায় এআই প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিস্তার যেন পরিবেশের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, আগামী দশকে এই চাহিদা আরও বহুগুণে বাড়বে।


২০৩০ ও ২০২৭ সালের আশঙ্কাজনক পূর্বাভাস

  •  ২০৩০ সালের মধ্যে এআই হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীর অন্যতম বড় কার্বন ও পানি গ্রাসকারী প্রযুক্তি।
  •  ২০২৭ সালের মধ্যে এআই প্রযুক্তিতে পানির ব্যবহার পৌঁছাতে পারে ৬৬০ কোটি ঘনমিটার, যা ডেনমার্কের এক বছরের পানি চাহিদার চার থেকে ছয় গুণ।

দায়িত্বশীল প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা

প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাদ দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তবে এর ব্যবহার হতে হবে আরও পরিবেশবান্ধব ও সচেতন। অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এখন ‘গ্রিন কম্পিউটিং’ ও ‘কার্বন-নিউট্রাল এআই’ এর দিকে ঝুঁকছে। আমাদেরও প্রয়োজন জাতীয় ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো।


ব্যবহারকারীদের করণীয়

  •  অপ্রয়োজনীয় এআই টুল ব্যবহার এড়িয়ে চলা
  •  টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেওয়া
  •  এআই প্ল্যাটফর্মের কার্বন ফুটপ্রিন্ট সম্পর্কে সচেতন হওয়া


এআই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনকে সহজ করেছে। কিন্তু এর ব্যবহারে দায়িত্বশীল না হলে তা ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমাদের প্রযুক্তির সঙ্গে থাকতে হবে, তবে সেই প্রযুক্তিকে হতে হবে পরিবেশবান্ধব ও মানবিক।

শুধু সঠিক ব্যবহারই প্রযুক্তিকে মানবতার সহযাত্রী করে তুলতে পারে। তাই আসুন, সচেতন হই—এআই ব্যবহারে হোক পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা ও বিবেচনা।


সূত্র : অনলাইন  

Post a Comment

If you any Question, Please contact us.

Previous Post Next Post