কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন হয়ে উঠেছে একটি একাডেমিক শিক্ষার ক্ষেত্র যেখানে পড়ানো হয় কিভাবে কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার তৈরি করতে হয় যা বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স |
একটি মেশিন যখন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে শুরু করে তখন সেটিকে বলা হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence) যখন মেশিন নিজের চারপাশ বিশ্লেষণ করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় এবং কোনো একটা কাজ সফল ভাবে করার সন্তাবনা বাড়িয়ে তোলে, সেটাকে আমরা বলতে পারি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। ইদানিং একটা যন্ত্র মানুষের ভাষা বুঝতে পারে, দাবার মতো খেলা খেলতে পারে, গাড়ি চালাতে পারে, তখন আমরা বলি এটি নিজস্ব একটি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছে। এটাও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
কেউ কেউ ভাবেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি হতে পারে। ধ্বংস করে দিতে পারে দেশ থেকে দেশান্তর। আবার অনেকে পজিটিভ দৃষ্টিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীকে আরো গতিময় ও আরো প্রাণোচ্ছল করে তুলবে। সাধিত হবে অনেক অসাধ্য কাজ। মানুষের বিকল্প হিসেবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স খুবই জরুরি বলে মনে করেন অনেকে।
এবার জেনে নিই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অধিকাংশ মানুষের কাছে এটি হচ্ছে রোবট জাতীয় কিছু আবার অনেক কাছে এটি হচ্ছে মানুষের মত চিন্তা করতে সক্ষম কোন মেশিন অথবা প্রোগ্রাম আবার অনেকের কাছে “মানবীয় অনুভূতি” সম্পন্য মেশিন অথবা প্রোগ্রাম। সাধারণভাবেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের একটা উদাহরণ আমরা পেতে পারি। সার্চ ইঞ্জিন গুগলে আমরা কিছু লিখতে গেলেই সে নিজে থেকে কিছু সাজেশন আমাদের জানায়। খুব সাধারণভাবে, এটাই আমাদের চাওয়ার সাথে সাথে গুগলের নিজস্ব চিন্তা করবার ক্ষমতা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
বিজ্ঞানীরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন।
- Artificial Narrow Intelligence ( ANI)
- Artificial General Intelligence (AGI)
- Artificial Super Intelligence.(ASI)
ANI,AGI,ASI |
আমরা এখন আছি প্রথম ধাপ অর্থাৎ ANI ধাপে। ANI সিস্টেম ১৯৯৭ সালে মানুষকে হারিয়ে তার দাপট শুরু করে। ‘ডীপ ব্লু’ নামের একটি কম্পিউটার বিশ্বখ্যাত দাবার গ্রান্ডমাস্টার চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে দেয়। তারপরের বছরেই আলফা গো মানুষকে হারায় ANI ব্যবহার করে। আলফা গো নামক কম্পিউটার প্রোগ্রামটি তৈরি করে গুগলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডীপমাইন্ড। ২০৪০ থেকে ২০৬০ সালকে দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ AGI বলে বিজ্ঞানীরা বেছে নিয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দ্বিতীয় ধাপ AGI । একে Strong AI বা Human Level AI- ও বলা হয়। AGI ধাপে যন্ত্র মানুষের মত চিন্তা করতে পারবে, পরিকল্পনাকরতে পারবে, সমস্যা সমাধান করতে পারবে, হঠাৎ নতুন ভিন্ন কোন পরিবেশে চারপাশ সাপেক্ষে নিজেকে মানিয়ে নেবার মত সক্ষমতা অর্জন করবে। ১৯৬০ সালের পরবর্তী বিশ বছরকে ASI ধাপে ভাগ করা হয়েছে। ASI হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের তৃতীয় ও সর্বাধুনিক পর্যায়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর কিছু নমুনা নিচে দেওয়া হলো:
আমরা হয় তো অজান্তেই এই ধরণের বুদ্ধিমতার সংস্পর্শে আসি রোজ এবং ব্যবহারও করে থাকি। ফোনে গেম যখন খেলি আমরা, আমরা এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করছি - সে দাবাই হোক কিংবা ক্ল্যাশ অফ ক্লাল। গুগল সার্চ ও এর আওতায় পরে। আপনি যত গুগল ব্যবহার করবেন, ততই আপনাকে বেশি করে জানবে গুগল এবং আপনি লাভবান হবেন এরম ফলাফল বেশি করে দেবে গুগল। এটাও এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ! এই যে পোস্টটি পড়ছেন আপনি, এটা আপনার ওয়াল এ আসবে কিনা, সেটাও ঠিক করে দেয় ফেসবুকের এক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
তবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে জড়িয়ে আছে নানান প্রশ্ন । মেশিন যদি ভাবতে শুরু করে, তাহলে সেটা কি ক্ষতিকর? মেশিনের কি নিজস্ব মস্তিস্ক হতে পারে? মানুষের মতো সেও কি ভাবতে পারে? তার কি অনুভূতি থাকতে পারে? যদি তাই হয়, তাহলে সেও কি মানুষের মতো কিছু দাবি রাখতে পারে? শেষমেশ, তারা কি মানুষের ক্ষতি করতে পারে?
স্টিফেন হকিংস এর ভাষায় : “পুরোপুরি ভাবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমতা (Artificial Intelligence) তৈরী হয়ে গেলে মানব সভ্যতা হয়তো শেষ হয়ে যেতে পারে। মেশিনেরা তখন নিজেদের বিকাশের কথা নিজেরাই ভাবতে পারবে এবং দ্রুত গতিতে নিজেদের ছড়াতে শুরু করবে। মানুষ কিন্ত তখন পিছিয়ে পড়বে।
এই সব বলতে বলতে মনে পরে যায় জেমস ক্যামেরনের (James Cameroon) সেই বিখ্যাত টার্মিনেটর (Terminator) সিনেমাটির কথা। সেখানে মেশিনেরা পৃথিবীকে দখল করে নিয়েছে এবং মানুষেরা যাতে লড়তে না পারে, তার জন্য মানুষদের মারতে পর্যন্ত তারা দ্বিধা করছে না। বিশ্বের বিজ্ঞানীরা তাই হয়তো বলছেন, বুদ্ধিমান মেশিন ভালো কিন্তু এই ধরণের গবেষণার ক্ষেত্রে আমাদের খুব সচেতন হওয়া দরকার।
জনপ্রিয় চারটি এআই ক্লাউড সার্ভিস সমুহ:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক:
এলান টিউরিংকে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক। ১৯৫০ সালের দিকে এলান টিউরিং একটি মেশিন বুদ্ধিমান কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য একটি টেস্ট এর কথা উল্যেখ করে গিয়েছেন, যা টিউরিং টেস্ট নামে পরিচিত। ঐ সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অনেক রিসার্চ হলেও এর পর অনেক দিন AI নিয়ে রিসার্চ বন্ধ থাকে। প্রধান একটা কারণ হিসেবে ধরা হয় কম্পিউটেশনাল পাওয়ার। ঐ সময়কার কম্পিউটার গুলো এত পাওয়ারফুল ছিল না। কম্পিউটারের প্রসেসিং পাওয়ার বাড়ার সাথে সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আবার রিসার্চ শুরু হয়েছে।
ফেসবুক, গুগল, আমাজন এর মত প্রতিষ্ঠান গুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রিসার্চ করার জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে । বর্তমান বিশ্বের অন্যতম টেক জায়ান্ট এলন মাস্ক গঠন করেছেন OpenAI নামক প্লাটফরম।
We're releasing an API for accessing new AI models developed by OpenAI. You can "program" the API in natural language with just a few examples of your task. See how companies are using the API today, or join our waitlist: https://t.co/SvTgaFuTzN pic.twitter.com/uoeeuqpDWR
— OpenAI (@OpenAI) June 11, 2020
যন্ত্র যখন মানুষ থেকেও দক্ষ ভাবে চিন্তা করতে পারবে তখনই যন্ত্র আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যাবে। অবশ্য এই পর্যায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিজ্ঞানীরা একই সাথে চিন্তিত ও শঙ্কিত। সবিশেষ আলোচনা এটাই রাখতে চাই,আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কে যদি কাজে লাগানো যায় সত্যি এক বিশাল বিপ্লব ঘটে যাবে প্রযুক্তিবিশ্বে। বর্তমানে রোবটিক্স এর উপর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রভাব বেড়েই চলেছে। বিমান চালনায় অটো পাইলটিং এর ব্যবহার বাড়ছে। এমন প্রোগ্রামগুলোকে আরও বেশি বাস্তব পরিস্থিতি বান্ধব করে তৈরি করা হচ্ছে।
The artificial intelligence company that Elon Musk helped found is now selling the text-generation software it previously said was too dangerous to launch https://t.co/ZaN13Dl4YC
— Business Insider (@businessinsider) June 12, 2020
প্রোগ্রাম ব্যবহার করে একদিন পাইলট ছাড়াই প্লেন চলতে পারবে- এমন লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছেন প্রোগ্রামাররা। অনেকক্ষেত্রে সেলফ ড্রাইভিং গাড়ির মাধ্যমে এব্যাপারে সফলতাও এসেছে। ইহাং-১৪৮ এর মাধ্যমে সেলফ পাইলটিং মানুষবাহী ড্রোন আমরা দেখছি এখন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে এরপরেও অনেক মুভি হয়েছে। প্রায় সবগুলোতেই দেখানো হয়েছে, কিভাবে কৃত্রিম নিজস্ব বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। তবু বিজ্ঞানীদের উপর বিশ্বাস রেখে বলতে চাচ্ছি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গড়ে দিবে আমাদের স্বপ্নের পৃথিবী। বিশেষ করে মেডিক্যাল সাইন্স এবং কৃষি কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পৃথিবী থেকে রোগ এবং দারিদ্র্যতা দূর করা সম্ভব।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অ্যাপ্লিকেশন
- স্বাস্থ্যসেবা
- অটোমটিভ বা স্বয়ংচালিত
- অর্থ ও অর্থনীতি
- সরকার
- আইন সম্পর্কিত পেশা
- সামরিক
- ভিডিও গেমস
- হসপিটালিটি বা আতিথেয়তা
- বিজ্ঞাপন
- শিল্প
- নিরীক্ষা
সহ আরো বহুল ব্যবহার রয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের।
Post a Comment
If you any Question, Please contact us.