বৃদ্ধ মা গাছ তার চারা গাছকে তরল চিনির মিশ্রন খাওয়ায় এবং সতর্ক করে তার প্রতিবেশীদের বিপদ দেখলে। তরুন কিছু চারা উদ্ধত আচরন করে পাতা অতিরিক্ত নাড়িয়ে, সূর্যের আলো ধাওয়া করে এবং অতিরিক্ত খেয়ে। যেখানে রাজকুমারী অপেক্ষা করে বৃদ্ধ রানীর মারার যাওয়ার জন্য। যখন গাছটি পড়ে যাবে তখন সে পূর্ন সূর্যের আলোতে রানীর ক্ষমতা দখল করবে। এইগুলো ঘটে অনেক ধীর গতিতে, যাকে আমরা বলে থাকি গাছের সময়। আমাদের মানুষের চোখে এই জিনিসগুলো ঘটার সময় মনে হবে অনন্তকাল।  এখানে আপনার পথ প্রদর্শক হবে গাছের ফিসফিসানি। 

উড ওয়েব ওয়াইডের চিত্র

পিটার ওয়েলেবেন, একজন জার্মান বনকর্মী এবং লেখক, তিনি গাছের অভ্যন্তরীন জীবন নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি গাছের নিজস্ব ভাষাগুলো সুন্দর সাজানো গুছানোভাবে প্রকাশ করতে পারেন। তিনি এবং তার স্ত্রী মিরিয়াম গাছের সেবা করার জন্য নিজেদের উতসর্গ করেছেন। তিনি জার্মানীর হামেল এর কাছেই থাকেন। তিনি তার বই “ The Hidden Life of Trees: What They Feel, How They  Communication”  নামক বইটি লিখে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন সারা বিশ্বে। বিশ্বের ১১ টা দেশে বেস্ট সেলার ও হয়েছে বইটি। এইটা গেলো তার কথা । এবার এই ব্যাপারে বিজ্ঞান কি বলে সেটা আমাদের জানা সব থেকে জরুরী। 

এখন কথা হচ্ছে গাছ কিভাবে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করতে পারে? 

বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে দেখেছেন যে আমাদের পায়ের নিচেই হচ্ছে গাছেদের এই তথ্য আদান প্রদান প্রক্রিয়া। গাছেরা ছত্রাকের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করে থাকে। যেমনঃ আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করে থাকি। এখানে ছত্রাক দুটি গাছের মধ্যকার ইন্টারনেট মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। ছত্রাক উদ্ভিদকে মাইলেসিয়াম নামক এক প্রকার পদার্থ প্রেরন করে পানির সাথে মিশিয়ে। গাছ এর থেকে সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় চিনি এবং অন্যান্য পুষ্টিকর পদার্থ তৈরি করে এবং ছত্রাক তার থেকে বিনিময় করে। গাছেরা নিজেদের মধ্যে এভাবে তথ্য আদান প্রদান করে থাকে, তার প্রতিবশী গাছগুলোর সঙ্গে। ছত্রাক হচ্ছে গাছের তথ্য আদান প্রদান বা কথা বলার মাধ্যম।  এই ছত্রাকগুলো গাছেদের সতর্ক করে দেয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্বন্ধে। সবথেকে মজার ব্যাপার হলো একটি গাছ যখন মারা যায় তখন তার পুষ্টিকর পদার্থগুলো অন্য গাছের দেহে স্থানান্তর করে যায়। সবথেকে আশ্চর্য বিষয় এটাই সারা পৃথিবীর সমস্ত গাছ এই ছত্রাকের দ্বারা নিজেদের মধ্যে একটা অদৃশ্য বন্ধন তৈরি করে রেখেছে। 

Can-trees-really-talk

বিভিন্ন বয়সের  সাতষট্টি ধরনের ডগলাস ফার নিজেদের মধ্যে রাইজোপোগন জেনাস নামক ছত্রাকের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকার প্রমান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। প্রকৃতির মধ্যে সবথেকে পরিচিত ছত্রাক হচ্ছে মাশরুম। মাশরুমের মাধ্যমে মাটির নিচে গাছগুলো  উড ওয়াইড ওয়েব এর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে একধরনের সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে। গাছেদের এই সমাজ ব্যাবস্থা আমাদের চোখে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। 

তথ্যসূত্রঃ বি.বি.সি নিউজ, টেড টক, ব্রাইট ভাইবস, আপ লিফট, ব্রিটিশ রয়্যাল সাইন্স সোসাইটি 

Post a Comment

If you any Question, Please contact us.

Previous Post Next Post